bn বাংলা
বাংলা বাংলা
English English
عربي عربي


+8801575-547999
সকাল ৯টা হতে রাত ১০টা
Community Welfare Initiative

একটি আয়াত যা কুরআনে চারটি স্থানে পুনরাবৃত্ত হয়েছে

আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
﴿رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ‎﴾
“আল্লাহ তাঁদের প্রতি সন্তুষ্ট, এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট।”

এই আয়াতটি চারটি সূরায় এসেছে:
• সূরা মায়িদাহ: আয়াত ১১৯
• সূরা তাওবা: আয়াত ১০০
• সূরা মুজাদালা: আয়াত ২২
• সূরা বাইয়্যিনাহ: আয়াত ৮

এই আয়াতটি দুটি অংশে বিভক্ত

প্রথম অংশ:
“আল্লাহ তাঁদের প্রতি সন্তুষ্ট” – এটি এমন একটি অবস্থা, যা আমরা সবাই অর্জন করতে চাই। এবং আমি মনে করি, এই অংশটি সকলের কাছেই বোধগম্য।

দ্বিতীয় অংশ:
“এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট।” – এটি অনুধাবন করা এবং বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করা অধিক কঠিন।
এখানে একটি প্রশ্ন আসে, “আপনি কি আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট?”
এটি একটি কঠিন প্রশ্ন, তাই না?
চলুন প্রশ্নটি একটু অন্যভাবে করি, “আপনি কি জানেন, আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হওয়া মানে কী?”

আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হওয়া মানে

  1. আপনার জীবনে যা কিছু আল্লাহ নির্ধারণ করেছেন – ভালো হোক বা খারাপ – তার সবকিছুকে স্বীয় অন্তর দিয়ে মেনে নেওয়া ও সন্তুষ্ট থাকা।
  2. যখন আল্লাহ আপনার জীবনে কোনো বিপদ দেন, তখন আপনার হৃদয়ে এই বিশ্বাস থাকা যে, আল্লাহ আপনার জন্য সেই বিপদেও কল্যাণ চেয়েছেন।
  3. মানুষের নিকট অভিযোগ না করে, বরং সমস্ত দুঃখ-কষ্টের কথা শুধুই আল্লাহর কাছে বলা এবং তাঁর ওপর সবকিছু সোপর্দ করে দেওয়া।
  4. আল্লাহ যখন দেন কিংবা কেড়ে নেন, সুস্থ করেন বা অসুস্থ করেন, অভাব দেন বা সম্পদ দেন — প্রতিটি অবস্থায় আপনি আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন।

নিজেকে জিজ্ঞেস করুন

আপনি কি নিজের চেহারা, জীবনসঙ্গী, পরিবার, সম্পদ, ভাগ্য এবং আপনার জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর প্রতি সন্তুষ্ট? এসব কিছু তো আল্লাহই আপনার জন্য নির্ধারণ করেছেন। তাহলে আপনি কি আল্লাহর এই নির্ধারণে সন্তুষ্ট?

এই আয়াতের গভীর ভাবনা থেকে আমরা পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বুঝতে পারি

  1. আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট থাকা মানে এই নয় যে, আপনি কখনো কষ্ট পাবেন না। আমরা মানুষ, এবং দুনিয়া পরীক্ষার স্থান। এমনকি রাসূলুল্লাহ ﷺ-ও তাঁর ছেলের মৃত্যুতে কেঁদেছেন।
  2. সবর ও রিদ্বা (সন্তুষ্ট থাকা) – এ দুটির মাঝে পার্থক্য রয়েছে। সবর মানে হলো ধৈর্য ধরে সহ্য করা। হয়তো আপনি অন্তরে অন্য কিছু চাচ্ছেন, কিন্তু বাধ্য হয়ে সহ্য করছেন। কিন্তু রিদ্বা (সন্তুষ্টি) মানে হলো, আপনি যেটা পেয়েছেন তাতেই খুশি, আপনি এর পরিবর্তে কিছুই চান না। আর যদি আপনি এমন এক স্তরে পৌঁছে যান যে, বিপদের জন্যও আল্লাহকে শুকরিয়া আদায় করেন, তখন আপনি শোকরকারীর স্তরে চলে যান।
  3. আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট থাকা – এটি একটি উচ্চ মর্যাদার স্তর, যেখানে কেবল তারাই পৌঁছায় যাদের অন্তর আল্লাহর ভালোবাসায় পূর্ণ।
    তারা কষ্টের মধ্যেও বলে:
    “আমি আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট, ইসলামের প্রতি সন্তুষ্ট, মুহাম্মাদ ﷺ এর প্রতি সন্তুষ্ট।” – কী চমৎকার বিশ্বাস ও কী চমৎকার ভরসা!
  4. আপনি দৃঢ় ঈমান রাখুন, আল্লাহ আপনাকে কেবল আপনার কল্যাণের জন্যই পরীক্ষা করেন। হয়তো কোনো ক্ষতি থেকে আপনাকে বাঁচাতে, হয়তো আপনার গুনাহ মাফের জন্য, হয়তো জান্নাতে আপনার মর্যাদা বাড়ানোর জন্য। তাই আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট থাকুন।
  5. যদি কেউ আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট না থাকে, তাহলে সে দুনিয়ার সবকিছু পেয়েও সন্তুষ্ট হতে পারবে না।
    রাসূল ﷺ বলেন: “যে সন্তুষ্ট হবে, তার জন্য সন্তুষ্টি আছে; আর যে অসন্তুষ্ট থাকবে, তার জন্য রয়েছে অসন্তুষ্টি।” সে জীবনের প্রতি পদে অসন্তুষ্ট থাকবে এবং সারাজীবন কষ্টে ও অশান্তিতে কাটবে।

তাহলে এই আয়াতের প্রতিফলন আমাদের জীবনে কিভাবে ঘটাতে পারি?

নিজের জীবনের দিকে তাকান। যা আপনি হারিয়েছেন বা যা আপনি পাননি – তা নিয়ে ভাবুন, আপনি কি তাতেও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট?
আবার বারবার বলুন, “হে আল্লাহ! আমি তোমার প্রতি সন্তুষ্ট, তুমি আমার প্রতি সন্তুষ্ট হও।”
যা কিছু আপনাকে আল্লাহর দিকে টেনে নেয়, তা দ্বারা তাঁর নিকটে পৌঁছান। কারণ আপনি যখন আল্লাহকে ভালোবাসবেন, তখন তাঁর নির্ধারণ (তাকদীর) ও ফায়সালাতেও ভালোবাসা অনুভব করবেন।

শেষ কথা

আপনার যা কিছু হয়েছে, তা কখনোই আপনাকে এড়াতে পারত না। আর যা আপনাকে এড়িয়েছে, তা কখনোই আপনার জন্য ছিল না। আল্লাহ আমাদের এমন অন্তর দান করুন যা তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট, তাঁর ফায়সালায় প্রীত, এবং তাঁর রেযামন্দির যোগ্য হয়ে উঠতে চায়। আমীন।

Share on