মসজিদে কুবা: ইসলামের প্রথম মসজিদ
ভূমিকা
ইসলামের ইতিহাসে যে মসজিদ সর্বপ্রথম নির্মিত হয়েছে, সেটি হলো মসজিদে কুবা। প্রিয়নবী মুহাম্মাদ ﷺ মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করার পথে কুবা অঞ্চলে এসে কয়েকদিন অবস্থান করেন এবং সেখানেই তিনি এই বরকতময় মসজিদ নির্মাণ করেন। তাই এটি ইসলামের ইতিহাসে এক অনন্য স্মারক হয়ে আছে।
নির্মাণের ইতিহাস
মসজিদে কুবা অবস্থিত মদীনার কুবা এলাকায়, যা আমর ইবন আউফ আল-আনসারী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুর বাড়ির নিকটে। রাসূলুল্লাহ ﷺ হিজরতের সময় প্রথমে এখানে অবস্থান করেন এবং সাহাবায়ে কেরামের সহযোগিতায় এই মসজিদ নির্মাণ করেন। তিনি স্বয়ং এর নির্মাণ কাজে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং এখানে সালাত আদায় করেছেন। নির্মাণের সময় আব্দুল্লাহ ইবন রাওয়াহা কবিতা গাচ্ছিলেন আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাথে সুর মিলিয়ে কবিতার শেষাংশ বলছিলেন।
আব্দুল্লাহ ইবন রাওয়াহা বলছিলেন—
“অফলাহা মান ইউ‘আলিজুল-মাসাজিদা”
(সফল সেই ব্যক্তি, যে মসজিদ নির্মাণ করে)
তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন:
“আল-মাসাজিদা” (মসজিদসমূহ)
অতঃপর আব্দুল্লাহ বললেন:
“ওয়া ইয়াকরাউল-কুরআনা কাইমান ওয়া কা‘ইদা”
(এবং সে দাঁড়িয়ে ও বসে কুরআন তিলাওয়াত করে)
তখন রাসূল ﷺ বললেন:
“ওয়া কা‘ইদা” (এবং বসে)
এরপর আব্দুল্লাহ বললেন:
“ওয়া লা ইয়াবীতুল-লায়লা আনহু রাকিদা”
(এবং সে এমন নয় যে রাতকে কুরআন থেকে গাফেল হয়ে ঘুমিয়ে কাটায়)
তখন রাসূল ﷺ বললেন:
“রাকিদা” (ঘুমন্ত অবস্থায়)
এভাবে কবিতা পাঠ করার সময় কবির সাথে সুর মিলিয়ে উত্তর দেওয়া বা পুনরাবৃত্তি করার এই পদ্ধতি আজও বিদ্যমান। পরবর্তীতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়মিতভাবে মসজিদে কুবা পরিদর্শন করতেন।
কুরআনে উল্লেখ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿لَمَسْجِدٌ أُسِّسَ عَلَى التَّقْوَى مِنْ أَوَّلِ يَوْمٍ أَحَقُّ أَنْ تَقُومَ فِيهِ﴾ [التوبة: ١٠٨]
“যে মসজিদ প্রথম দিন থেকেই তাকওয়ার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেখানে দাঁড়ানো (ইবাদত করা) অধিক উপযুক্ত।”[১]
অনেক মুফাসসির উল্লেখ করেছেন যে এই আয়াতে মসজিদে কুবা-র কথাই বোঝানো হয়েছে।
হাদীসে মসজিদে কুবার ফযীলত
১. নবী ﷺ এর নিয়মিত যাতায়াত
ইবন উমার রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন,
كَانَ النَّبِيُّ ﷺ يَأْتِي مَسْجِدَ قُبَاءٍ كُلَّ سَبْتٍ، مَاشِيًا وَرَاكِبًا، وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ يَفْعَلُهُ.
“নবী ﷺ প্রতি সাপ্তাহে মসজিদে কুবা যেতেন, কখনো হেঁটে, কখনো আরোহী হয়ে। ইবন উমর রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা নিজেও তা করতেন।”[২]
২. কুবায় সালাত = উমরাহ
সাহল ইবন হুনাইফ ইবন উমর রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
«مَنْ تَطَهَّرَ فِي بَيْتِهِ، ثُمَّ أَتَى مَسْجِدَ قُبَاءٍ فَصَلَّى فِيهِ صَلَاةً، كَانَ لَهُ كَأَجْرِ عُمْرَةٍ»
“যে ব্যক্তি নিজের ঘরে পবিত্রতা অর্জন করে (ওযু করে), তারপর মসজিদে কুবায় এসে একটি সালাত আদায় করে, তার জন্য একটি উমরার সমান সাওয়াব রয়েছে।”[৩]
উপসংহার
মসজিদে কুবা ইসলামের প্রথম মসজিদ, যা তাকওয়ার ভিত্তিতে নির্মিত। এখানে সালাত আদায় করা সুন্নাহ এবং এর সাওয়াব উমরার সমান। রাসূলুল্লাহ ﷺ নিজে এর নির্মাণে অংশগ্রহণ করেছেন এবং নিয়মিত এটি পরিদর্শন করেছেন।
অতএব, যারা মদীনায় যাবেন, তাদের জন্য মসজিদে কুবায় গমন করা এবং সেখানে দুই রাকাত সালাত আদায় করা একটি সাওয়াবের আমল।