bn বাংলা
বাংলা বাংলা
English English
عربي عربي


+8801575-547999
সকাল ৯টা হতে রাত ১০টা
Community Welfare Initiative

হজের মাসে উমরাহ আদায় প্রসঙ্গ

প্রশ্ন: কারো পক্ষে হজের মাসসমূহে হজ আদায় না করে শুধু উমরাহ আদায় করা বৈধ কি না? যেমন, আমি হজের প্রায় অর্ধমাস পূর্বে মক্কা মুকাররমায় প্রবেশ করে উমরাহ আদায় করলাম। এর পর হজ না করেই নিজ দেশে ফিরে আসলাম। আমার জন্য এ কাজটি কতটুকু বৈধ হলো?

উত্তর: আল-হামদুলিল্লাহ

আলেমদের মাঝে কোনো প্রকার মতপার্থক্য ছাড়াই বলা যায় যে, হজের মাসসমূহে উমরাহ আদায় করা জায়েয আছে। চাই এ বছর সে হজের নিয়ত করুক বা না করুক। সর্বাবস্থায় তার উমরাহ পালন বৈধ।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াল্লাম তাঁর জীবনে মোট চার বার উমরাহ পালন করেছেন। প্রতিবারই তিনি তা জিলকদ মাসেই সম্পাদন করেছেন। আর জিলকদ হজের মাসসমূহেরই একটি মাস। কেননা হজের মাস মোট তিনটি, শাওয়াল, জিলকদ আর জিলহজ। ঐ সময় তিনি শুধু উমরাহ করেছেন হজ করেননি। হ্যাঁ, তিনি তার শেষ উমরার সময় হজ করেছেন। আর এটিই ছিল তাঁর হাজ্জাতুল বিদা বা বিদায়ী হজ।

প্রমাণ: আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اعْتَمَرَ أَرْبَعَ عُمَرٍ كُلُّهُنَّ فِي ذِي الْقَعْدَةِ إِلَّا الَّتِي مَعَ حَجَّتِهِ: عُمْرَةً مِنَ الْحُدَيْبِيَةِ، أَوْ زَمَنَ الْحُدَيْبِيَةِ فِي ذِي الْقَعْدَةِ، وَعُمْرَةً مِنَ الْعَامِ الْمُقْبِلِ فِي ذِي الْقَعْدَةِ، وَعُمْرَةً مِنْ جِعْرَانَةَ حَيْثُ قَسَمَ غَنَائِمَ حُنَيْنٍ فِي ذِي الْقَعْدَةِ، وَعُمْرَةً مَعَ حَجَّتِهِ»

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মোট চারটি উমরাহ করেছেন, হজের সাথে সম্পাদিত ওমরাটি ছাড়া সবকটি ওমরাই ছিল জিলকদ মাসে। একটি উমরাহ ছিল হুদাইবিয়া থেকে প্রত্যাবর্তনের সময় অথবা হুদাইবিয়ার বছর জিলকদে, আরেকটি পরবর্তী বছর জিলকদে, আরেকটি জিয়িররানা থেকে যে বছর তিনি হুনাইনের গণিমত বন্টন করেন সেটিও জিলকদে এবং সর্বশেষ উমরাহ ছিল তার হজের সাথে।”[1]

ইমাম নাওয়াওয়ী রাহিমাহুল্লাহ উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন, আনাস ও ইবন উমারের বর্ণনায় তাদের উভয়ের ঐকমত্য পরিলক্ষিত হয় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম চারটি উমরাহ পালন করেন, একটি ছিল ৬ষ্ঠ হিজরীর জিলকদ মাসে হুদাইবিয়ার বছর। হুদাইবিয়াতে তাদের বাধা দেওয়া হলে, তারা হালাল হয়ে যায় এবং একে উমরাহ হিসেবে গণনা করে। দ্বিতীয়টি ছিল, সপ্তম হিজরীর জিলকদ মাসে তাকে ‌উমরাতুল কাযা বলা হয়। তৃতীয়টি ছিল, মক্কা বিজয়ের বছর অষ্টম হিজরীর জিলকদে, আর চতুর্থটি ছিল বিদায় হজের সাথে। এ ওমরার ইহরাম ছিল জিলকদে আর বাস্তবায়ন ছিল জিলহজে।

উলামায়ে কেরাম বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওমরাগুলো জিলকদে পালন করেন। কারণ, এ মাসের মধ্যে উমরাহ পালন করার ফযীলত বেশি। এ ছাড়া তাঁর উদ্দেশ্য ছিল, জাহেলিয়্যাতের রীতি-নীতির মোকাবেলা করা। কারণ, মুশরিকরা বিশ্বাস করতো, জিলকদ মাসে উমরাহ পালন করা মারাত্মক অন্যায় ও গুরুতর অপরাধ। তাদের এ আকীদাকে বাতিল করার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মাসেই একাধিক উমরাহ পালন করেন, যাতে এ মাসে উমরাহ পালনের বৈধতা সম্পর্কে আর কোনো সংশয় না থাকে এবং জাহেলিয়্যাতের ভুল ধারণা চিরতরে খতম হয়ে যায়।

সমাপ্ত

মূল: মুহাম্মাদ ইবন সালেহ উসাইমীন
অনুবাদ: কামাল উদ্দিন মোল্লা
সম্পাদনা: প্রফেসর ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া


[1] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪১৪৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২৫৩।

Share on