bn বাংলা
বাংলা বাংলা
English English
عربي عربي


+8801575-547999
সকাল ৯টা হতে রাত ১০টা
Community Welfare Initiative

প্রবাসী স্বামীর কাছে স্ত্রীর নগ্ন ছবি পাঠানোর বিধান

প্রশ্ন: স্ত্রী যদি নিজের নগ্ন ছবি স্বামীকে প্রবাসে পাঠায়—এর বিধান কী?

উত্তর: এ ব্যাপারে শাইখ সালেহ আল-ফাওযানের একটি বক্তব্য তার অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে এসেছে, তাতে উপরের প্রশ্নের উত্তর এভাবে দেওয়া হয়েছে যে, নারীদের ছবি তোলা সম্পূর্ণভাবে হারাম; কারণ এর মাধ্যমে বহু ফিতনা ও অনিষ্টের সৃষ্টি হয়, এর সাথে সাথে ছবির হুকুম মৌলিকভাবেও হারাম। তাই ভ্রমণের জন্য হোক বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে হোক, নারীদের জন্য ছবি তোলা বৈধ নয়।

সৌদি আরবের ‘হাইয়াতু কিবারিল উলামা’ও এ বিষয়ে হারামের ফতোওয়া দিয়েছে। সুতরাং স্বামী-স্ত্রী হওয়ার অজুহাতে স্ত্রীর নগ্ন ছবি তুলতে পারবে না। এই জঘন্য কাজ স্ত্রীর সাথে বৈধ সম্পর্ক থাকলেও হালাল হয়ে যায় না।

প্রবাসে স্ত্রীর অনুপস্থিতি এটিকে বৈধ করে না, বরং নারীদের ছবি তোলাই মূলত নিষিদ্ধ।

স্ত্রীর নগ্ন বা অর্ধনগ্ন ছবি সংরক্ষণের ক্ষতিসমূহ:

বর্তমান ডিজিটাল যুগে প্রযুক্তির অপব্যবহারের কারণে নানাবিধ সামাজিক ও নৈতিক বিপর্যয় ঘটছে। এর মধ্যে একটি মারাত্মক প্রবণতা হলো—স্ত্রীর নগ্ন বা অর্ধনগ্ন ছবি মোবাইল, ল্যাপটপ বা অনলাইন ক্লাউডে সংরক্ষণ করা। অনেকেই ভাবেন—এটা ব্যক্তিগত ও নিরীহ বিষয়, এতে ক্ষতির কিছু নেই। বাস্তবে এটি শুধুই ক্ষতিকর নয়, বরং বহু অনিষ্ট ও ফিতনার দরজা খুলে দেয়। নিচে এর কয়েকটি ক্ষতির দিক তুলে ধরা হলো:

১. তথ্যচুরি ও অনৈতিক প্রচারের ঝুঁকি

এ ধরনের ছবি চুরি হয়ে যেতে পারে, মোবাইল বা ডিভাইস হারিয়ে যেতে পারে, কিংবা অসতর্কতাবশত অন্য কারো হাতে চলে যেতে পারে। এর ফলে সেই ছবি সমাজে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং নানা অনৈতিক কাজে ব্যবহৃত হতে পারে। একবার ছড়িয়ে পড়লে তা আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয় না।

২. তালাকের পর সম্পূর্ণ হারাম হয়ে যায়

স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যদি ভবিষ্যতে বিচ্ছেদ ঘটে, তবে সেই নারী স্বামীর জন্য পরপুরুষে পরিণত হবে। তখন তাঁর নগ্ন বা অর্ধনগ্ন ছবি দেখা তো দূরের কথা, রাখা পর্যন্ত সম্পূর্ণরূপে হারাম ও গোনাহের কাজ হবে।

৩. ব্ল্যাকমেইল ও মানসিক নির্যাতনের সম্ভাবনা

বিয়ের পর স্বামী নিজেই হয়তো সেই ছবি ব্যবহার করে স্ত্রীর উপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে। যেমন: অর্থ দাবি করা, অবৈধ কোনো চাহিদা পূরণে বাধ্য করা, কিংবা সামাজিকভাবে হেয় করার হুমকি দেওয়া। বাস্তবে এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে যেখানে স্বামী স্ত্রীর ছবি ব্যবহার করে তাকে ব্ল্যাকমেইল করেছে।

৪. উত্তেজনা প্রশমনের বদলে বাড়িয়ে তোলে

অনেকে মনে করেন, স্ত্রীর ছবি দেখে দূরে থেকেও যৌন উত্তেজনা দমন করা যাবে। বাস্তবে এটি উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তোলে এবং ফলস্বরূপ ব্যক্তি হস্তমৈথুন, পরনারীতে আসক্তি, কিংবা সমকামিতার মতো গর্হিত কাজে লিপ্ত হয়ে যেতে পারে—নাউযুবিল্লাহ! এতে পবিত্রতা ও তাকওয়ার মারাত্মক ক্ষতি হয়।

সুতরাং স্ত্রীর নগ্ন ছবি তোলা বা সংরক্ষণ করা কোনো অজুহাতেই বৈধ নয়; বরং এটি স্পষ্টভাবে হারাম এবং বহু অনিষ্ট ও ফিতনার দরজা খুলে দেয়।

স্ত্রী-স্বামীর সম্পর্ক পরস্পরের আবরণ ও নিরাপত্তার সম্পর্ক। একে অন্যকে ঢেকে রাখা ও গোপনীয়তা রক্ষা করাই এই সম্পর্কের সৌন্দর্য। তাকে নগ্ন করা নয়, ঢেকে রাখাই প্রকৃত ভালোবাসা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿هُنَّ لِبَاسٞ لَّكُمۡ وَأَنتُمۡ لِبَاسٞ لَّهُنَّۗ﴾ [البقرة: ١٨٧] 

“তারা তোমাদের জন্য পোশাক, আর তোমরা তাদের জন্য পোশাক।”[১]

করণীয় ও সচেতনতা

  • দীর্ঘদিন স্ত্রী-সন্তান থেকে বিচ্ছিন্ন না থাকা।
  • যদি দূরে থাকাটাই আবশ্যক হয় এবং স্ত্রী এতে সম্মত থাকে, তাহলে
    • নারীদের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকা
    • দৃষ্টি হেফাযত করা
    • একাকিত্ব ও হারাম পরিবেশ এড়িয়ে চলা
    • নেক আমলে মনোনিবেশ করা, বিশেষত নফল সিয়াম রাখা
    • সৎ সঙ্গীদের সাহচর্যে থাকা—অত্যন্ত জরুরি।

আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সবাইকে ফিতনা থেকে হেফাযত করুন, পরস্পরের ইজ্জত ও গোপনীয়তা রক্ষায় হিদায়াত দান করুন এবং নিজের সন্তুষ্টির পথে পরিচালিত করুন। আমিন।

  1. [১]সূরা আল-বাকারা: ১৮৭।
Share on