ষাণ্ডার গর্তে ঢুকে পড়া জাতি: রাসূলের ভবিষ্যদ্বাণী ও আমাদের বাস্তবতা
প্রশ্ন: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাফিরদের অনুসরণে প্রবেশের ‘গর্ত’ হিসেবে (جُحر الضبّ) ‘ষাণ্ডার গর্ত’ শব্দটি কেন বেছে নিলেন?
উত্তর: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা কিছু বলেন, তা সবই হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে ওহী। তাহলে কেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা অন্য কোনো প্রাণীর গর্ত না বেছে নিয়ে ষাণ্ডার গর্তকেই বেছে নিলেন?
ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহ তার সহীহ বুখারীতে আবু সাঈদ আল-খুদরী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«لَتَتَّبِعُنَّ سَنَنَ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ، شِبْرًا بِشِبْرٍ، وَذِرَاعًا بِذِرَاعٍ، حَتَّى لَوْ دَخَلُوا فِي جُحْرِ ضَبٍّ لَاتَّبَعْتُمُوهُمْ، قُلْنَا: يَا رَسُولَ اللهِ آلْيَهُودَ وَالنَّصَارَى؟ قَالَ: فَمَنْ؟»
“তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তীদের পথ অনুসরণ করবে একেবারে হুবহু—হাতের পর হাত, বাহুর পর বাহু পর্যন্ত, এমনকি তারা যদি ‘ষাণ্ডার গর্তে’ প্রবেশ করে, তবে তোমরাও তাদের অনুসরণ করবে! আমরা বললাম: হে আল্লাহর রাসূল, আপনি কি ইয়াহূদী-নাসারাদের কথা বলছেন? তিনি বললেন: তাহলে আর কার কথা?”[১]
এই হাদীসের আরও অনেক বর্ণনা আছে, যেগুলোর মর্ম একই এবং তুলনাও ‘ষাণ্ডার গর্ত’ দিয়েই করা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে অনেক গবেষণার পর্যায়ে একবার একটি ভিডিও দেখি—যেটা ছিল আরব উপদ্বীপের কিছু ভাইয়ের ষাণ্ডা শিকারের দৃশ্য—সেখানে দেখা গেল এক চমকপ্রদ ব্যাপার!
তারা ষাণ্ডা শিকার করছিল এভাবে যে, তারা ষাণ্ডার গর্তে ঘন পানি ঢালছিল, ফলে ষাণ্ডাটি বাধ্য হয়ে বেরিয়ে আসছিল এবং সাথে সাথে তারা সেটিকে ধরে ফেলছিল।
এর কারণ হলো, ষাণ্ডা সাধারণত তার গর্তে শুধু একটি মাত্র পথ রাখে। বিপরীতে, অন্য অনেক প্রাণী তাদের গর্তে একাধিক পথ তৈরি করে, যেন হাওয়া চলাচল করে এবং শত্রুর আক্রমণ হলে পালানোর সুযোগ থাকে।
অতএব, ষাণ্ডার গর্ত হচ্ছে একটি ধ্বংসের ফাঁদ—যে এতে ঢোকে, সে মৃত্যুর মুখে পড়ে। যদি কেউ সেই একমাত্র ফাঁকা পথটি বন্ধ করে দেয়, তাহলে ষাণ্ডাটি বের হতে পারে না এবং ভিতরে থেকেই মারা যায়। অথবা যদি পানি ঢালা হয়, তাহলে তাকে বের হয়ে আসতেই হয়।
প্রাণীবিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, ষাণ্ডার গর্ত একদিকে যেমন খুব নোংরা, অন্যদিকে খুবই সরু ও অস্বস্তিকর। তার ভিতরে এমন কিছুই নেই যা কারো দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে!
এ যেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বলতে চাচ্ছেন: “তোমরা কাফিরদের পথ, ধ্বংসাত্মক কাজগুলো, এমনকি যেগুলোর স্পষ্টতই কোনো সৌন্দর্য নেই এবং যেগুলো ঘৃণিত, সেসবও অন্ধভাবে অনুসরণ করবে!” এবং বাস্তবে সেটাই তো আজ আমরা দেখছি।
পশ্চিমা বিশ্বের বহু কিছু যেগুলোর বাস্তবতা আজ পরিষ্কার হয়ে গেছে—যেগুলোর ব্যর্থতা ও ক্ষতিকর দিকগুলো তারাই আজ স্বীকার করছে—আমরা তবুও সেগুলোর অনুসরণে ব্যস্ত! যেমন,
- পরিবারবিনাশী আইন
- বিয়ের ধর্মহীন (সিভিল) পদ্ধতি
- সমকামিতার রোগ
- ধ্বংসাত্মক ফ্যাশন
- নারীদের অভিভাবকতা থেকে মুক্তির দাবি
- ব্যভিচার ও মদ্যপানের স্বাধীনতা
এসব বিষয় সুস্থ প্রকৃতির মনগুলোকে ঘৃণা করে, তবুও আমরা সেগুলোর দিকে ঝুঁকছি।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের ব্যাপারে সত্য কথাই বলেছেন—আমরা পশ্চিমাদের অনুসরণ করছি, যাদের পেছনে ইয়াহূদী ও নাসারারা নেতৃত্ব দিচ্ছে, একেবারে হুবহু কদমে কদম মিলিয়ে।
এমনকি আজকের দিনে শয়তান-পূজাও ‘ব্যক্তিস্বাধীনতা’র একটি রূপ হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে! আমরা আমাদের পরিচয় হারিয়ে ফেলেছি। আমরা পশ্চিমাদের মতো হওয়ার চেষ্টা করছি, ষাণ্ডার গর্তে ঢুকে পড়েছি।
অতএব, আমাদের দরকার—নিজেদের ব্যক্তিত্বকে পুনর্গঠন করা, এই ‘ষাণ্ডা চরিত্র’ বর্জন করা এবং আল্লাহর এই বাণীকে জীবনের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করা:
﴿وَأَنَّ هَٰذَا صِرَٰطِي مُسۡتَقِيمٗا فَٱتَّبِعُوهُۖ وَلَا تَتَّبِعُواْ ٱلسُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمۡ عَن سَبِيلِهِۦۚ ذَٰلِكُمۡ وَصَّىٰكُم بِهِۦ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ﴾
“এটাই আমার সরল পথ, সুতরাং তোমরা একে অনুসরণ করো। অন্য পথগুলো অনুসরণ করো না, তা হলে সেগুলো তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে। তিনি এসব কথাই তোমাদেরকে উপদেশ দেন, যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পারো।”[২] অন্যথায়, আমাদের নিয়তি হবে—চিরকাল ষাণ্ডার গর্তে পড়ে থাকা!