bn বাংলা
বাংলা বাংলা
English English
عربي عربي


+8801575-547999
সকাল ৯টা হতে রাত ১০টা
Community Welfare Initiative

মুয়াজ্জিন কখন বলবে “আস-সালাতু খাইরুম মিনান নাউম”, যে ব্যক্তি এ বাক্য শুনবে তার কী বলা উচিত?

প্রশ্ন: (الصلاة خير من النوم) তাহাজ্জুদের আযানে বলা উত্তম, না ফজরের আযানে বলা উত্তম? এ বাক্য বলার পিছনে দলীল কী? মুয়াযযিনের মুখ থেকে যে ব্যক্তি এ বাক্য শুনবে, সে কী বলবে?

উত্তর: আল-হামদুলিল্লাহ।
আবু মাহযূরার সনদে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, ফজরের দ্বিতীয় আযানে (الصلاة خير من النوم) বলা সুন্নত।

অনুরূপ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, ফজর উদিত হওয়ার পর দ্বিতীয় আযানে মুয়াযযিন এ বাক্য বলত। তিনি বলেন, অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠতেন, দুই রাকাত সালাত আদায় করতেন এবং প্রথম আযানের পর সালাতের জন্য বের হতেন। মূলত: এটাই দ্বিতীয় আযান, ইকামতের বিবেচনায় এটাকে প্রথম আযান বলা হয়েছে, যেহেতু ইকামতকেও আযান বলা হয়।
অতএব, সুন্নত হচ্ছে ফজর উদিত হওয়ার পর দ্বিতীয় আযানে (الصلاة خير من النوم) বলা। ইকামতের বিবেচনায় এ আযানকে দ্বিতীয় আযান বলা হয়। আর ইসলামি পরিভাষায় প্রথম আযানকে সতর্কতার আযান বলা হয়। এ ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যেন তোমাদের জাগ্রতারা ঘরে ফিরে যায়, আর ঘুমন্তরা জাগ্রত হয়।

ফজরের প্রথম আযানের উদ্দেশ্য সতর্ক করা। ঘুমন্ত ব্যক্তিরা যেন জেগে যায়, আর যারা জাগ্রত রয়েছে তারা যেন সালাত সংক্ষেপ করে। কারণ ফজরের সময় ঘনিয়ে এসেছে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার হাদীসে দ্বিতীয় আযানকে ইকামতের বিবেচনায় প্রথম আযান বলা হযেছে। কারণ, ইকামতও আযান। হ্যাঁ, ফজরের আযান সতর্কতার আযানের তুলনায় দ্বিতীয়।

কেউ কেউ বলেছেন, ফজর উদিত হওয়ার পূর্বে সতর্কতার আযানে الصلاة خير من النوم বলবে, (আল্লাহ ভালো জানেন) এরও সুযোগ রয়েছে; কিন্তু কোনোভাবেই উভয় আযানে বলবে না। তবে উত্তম হচ্ছে দ্বিতীয় আযানে الصلاة خير من النوم বলা, ইকামতের তুলনায় যে আযান প্রথম। অর্থাৎ ফজর উদিত হওয়ার পরের আযান।

الصلاة خير من النوم (সালাত ঘুম থেকে উত্তম) এর দ্বারা উদ্দেশ্য ফরয সালাত। আল্লাহ যে সালাত মানুষের উপর অবধারিত করে দিয়েছেন, সে সালাতই ঘুম থেকে উত্তম। মানুষের জন্য তা আদায় করা ফরয, অবশ্য কর্তব্য। শেষ রাতে কিংবা মধ্যরাতে নফল পড়া ওয়াজিব নয়; বরং যখন ঘুমের চাপ সৃষ্টি হয়, তখন ঘুমই উত্তম। প্রয়োজন মোতাবেক ঘুম সেরে নেয়ার জন্য ঘুমিয়ে পড়াই শ্রেয়, যেন ফরয সালাত যথাযথভাবে আদায় করা সম্ভব হয়। এতে সন্দেহ নেই, ফরয সালাত সব সময়ই ঘুম থেকে উত্তম। তাই ফরয সালাত সঠিক ও সুন্দরভাবে আদায় করার জন্য যাতে শরীরের ক্লান্তি দূর হয় সে পরিমাণ ঘুমানো জরুরি।

আর الصلاة خير من النوم শোনে শ্রোতাগণও মুয়াজ্জিনের ন্যায় الصلاة خير من النوم বলবে। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

(إِذَا سَمِعْتُمْ الْمُؤَذِّنَ فَقُولُوا مِثْلَ مَا يَقُولُ)

“যখন তোমরা মুয়াযযিনকে আযান দিতে শোন, তখন সে যা বলে তোমরা তাই বল।” অতএব, শ্রোতাগণও বলবে الصلاة خير من النوم যেমন তারা বলে الله أكبرأشهد أن لا إله إلا الله বাক্যগুলোর সময়। তবে মুয়াযযিন যখন حي على الصلاة حي على الفلاح বলে, তখন তারা বলবে: لا حول ولا قوة إلا بالله এটাই বিধান ও শরী‘আত কর্তৃক অনুমোদিত।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মুয়াযযিনকে বলতে শোনতেন: حي على الصلاة তখন তিনি বলতেন: لا حول ولا قوة إلا بالله আবার যখন তিনি শোনতেন: حي على الفلاح তখন তিনি বলতেন: لا حول ولا قوة إلا بالله কারণ, সে জানে না, সালাত আদায় করার ক্ষমতা তার হবে কি না। অনুরূপ সে জানে না, সালাত আদায় করা তার জন্য সহজ হবে কি না। অতএব, সে বলবে: لا حول ولا قوة إلا بالله এর অর্থ: আমার কোনো সামর্থ্য নেই, মুয়াযযিনের ডাকে সাড়া দেওয়া, মসজিদে হাযির হওয়া ও সালাত আদায় করা, একমাত্র আল্লাহ তাআলার সাহায্য ছাড়া এবং আল্লাহ ছাড়া আমার কোনো ক্ষমতাও নেই। বস্তুতঃ মুয়াযযিন তাকে কল্যাণের দিকে আহ্বান করেছে, তার উচিত তার ডাকে সাড়া দেওয়া এবং বলা لا حول ولا قوة إلا بالله এটা শরী‘আত অনুমোদিত ও বৈধ। অর্থাৎ মুয়াযযিনের ডাকে সাড়া দেওয়া, জমা‘আতের সাথে সময় মতো সালাত আদায় করা ও অন্যান্য কর্ম সম্পাদন করার মতো কোনো সামর্থ্য ও ক্ষমতা আমার নেই, একমাত্র আল্লাহর সাহায্য ছাড়া।

সমাপ্ত

নূরুন আলাদ্দারব ফতোয়া সমগ্র (৬৮৭-৬৮৫/২)

Share on