দ্রুয সম্প্রদায়ের আক্বীদা-বিশ্বাস
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, দ্রুয ও নুসাইরী সম্প্রদায়ের ব্যাপারে শরীয়তের বিধান কী? উত্তরে তিনি বলেছিলেন—
এই দ্রুয ও নুসাইরীরা মুসলিমদের ঐকমত্য অনুযায়ী কাফের।
তাদের ব্যাপারে শরীয়তের বিধান
- তাদের জবাই করা পশুর মাংস খাওয়া জায়েয নয়।
- তাদের নারীদের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া বৈধ নয়।
- তাদের নিকট থেকে জিজিয়া গ্রহণও বৈধ নয়; কারণ তারা ইসলাম ত্যাগকারী মুরতাদ।
- তারা না মুসলিম, না ইয়াহূদী, না খ্রিস্টান।
তাদের আক্বীদা ও কর্ম
- তারা পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, রমাদ্বান মাসের সিয়াম, হজের ফরযিয়ত ইত্যাদি কিছুই স্বীকার করে না।
- তারা মৃত জন্তু, মদ্যপান এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেগুলো হারাম করেছেন, সেগুলো হারাম বলে মানে না।
- তারা মুখে শাহাদাত পাঠ করলেও, উপরোক্ত আক্বীদা ও বিশ্বাসের কারণে মুসলিমদের সর্বসম্মত মতে কাফের।
নুসাইরী ও দ্রুযদের পরিচয়:
১. নুসাইরী সম্প্রদায়:
- এরা আবু শু‘আইব মুহাম্মাদ ইবন নুসাইর নামক ব্যক্তির অনুসারী।
- সে ছিল অতিশয় বাড়াবাড়িকারী (গুলুকারী)।
- তার অনুসারীরা বলে, ‘আলী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুই আল্লাহ!
২. দ্রুয সম্প্রদায়:
- তারা হাশতাকীন আদ-দুরযী নামক ব্যক্তির অনুসারী।
- সে ছিল মিশরের বাতেনী শাসক আল-হাকিমের গোলাম।
- তাকে তাইমুল্লাহ ইবন ছা‘লাবাহ-এর উপত্যকায় পাঠানো হয়েছিল।
- সে সেখানকার লোকদেরকে ‘আল-হাকিম’-কে ইলাহ (উপাস্য) হিসেবে মানতে আহ্বান করে।
- তারা তাকে বলে “আল-বারি আল-গুলাম” (অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তা কিশোর), আর তার নামে শপথ করে।
তাদের ধর্মীয় শিকড় ও বিশ্বাস
- তারা ইসমাঈলিয়া ফির্কার অন্তর্ভুক্ত।
- তারা বিশ্বাস করে, মুহাম্মাদ ইবন ইসমাঈল ইবন মুহাম্মাদ সে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের শরীয়ত রহিত করেছে।
- তারা গুলুকারী ফির্কাগুলোর চেয়েও বড় কাফের।
- তারা বলে:
- জগত চিরকাল থেকেই আছে।
- পুনরুত্থান বলে কিছু নেই।
- ইসলামে ফরয ও হারামের কোনো বাস্তবতা নেই।
তাদের প্রকৃত পরিচয়
- তারা কারামিতা বাতেনিয়া ফির্কার অন্তর্ভুক্ত।
- তারা ইয়াহূদী, খ্রিস্টান ও আরব মুশরিকদের চেয়েও বড় কাফের।
তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য ও আদর্শ:
- তারা হয় হবে এরিস্টটল ও তার মতাদর্শীদের পথ অনুসারী দার্শনিক,
- নয়তো অগ্নিপূজক (মাজুস)।
তাদের আক্বীদা হলো দার্শনিক ও অগ্নিপূজকদের মতবাদের মিশ্রণ, আর বাহ্যিকভাবে তারা শিয়া মতবাদের মুখোশ পরে থাকে।
ইবন তাইমিয়্যাহ রাহিমাহতুল্লাহ বলেন, “এদের কুফর এমন একটি বিষয়, যাতে মুসলিমদের মধ্যে কোনো মতভেদ নেই। বরং যে ব্যক্তি এদের কুফর নিয়ে সন্দেহ পোষণ করে, সেও তাদের মতো কাফের।
তারা না কিতাবী (ইয়াহূদী/খ্রিস্টান), না মুশরিকদের পর্যায়ভুক্ত। বরং তারা চূড়ান্ত বিভ্রান্ত কাফের। তাদের খাবার খাওয়াও বৈধ নয়…ইত্যাদি।”
তথ্যসূত্র: উৎস: ফাতাওয়া আল-লাজনাতুদ দায়েমাহ (২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৮৮–২৯২) থেকে সংক্ষিপ্ত ও সামান্য পরিবর্তিত।