bn বাংলা
বাংলা বাংলা
English English
عربي عربي


+8801575-547999
সকাল ৯টা হতে রাত ১০টা
Community Welfare Initiative

কিয়ামতের দিন মানুষ ও জীব-জন্তুর উপস্থিতি

প্রশ্ন: সম্ভব হলে অনুগ্রহপূর্বক আমাদেরকে বলুন, পুনরুত্থানের সময় মানুষের অবস্থা কেমন হবে? তারা কি পোশাক অবস্থায় থাকবে না পোশাকহীন? মৃত্যুর পর জীব-জন্তুও কি উপস্থিত হবে?

উত্তর: আল-হামদুলিল্লাহ,
কিয়ামতের দিনকে আল্লাহ তা‘আলা يوم الجمع বা সমবেত হওয়ার দিন বলেছেন, কারণ আল্লাহ তা’আলা সেখানে তার সকল বান্দা মানুষ ও জীনকে সমবেত করবেন। তিনি ইরশাদ করেন:

﴿إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَةٗ لِّمَنۡ خَافَ عَذَابَ ٱلۡأٓخِرَةِۚ ذَٰلِكَ يَوۡمٞ مَّجۡمُوعٞ لَّهُ ٱلنَّاسُ وَذَٰلِكَ يَوۡمٞ مَّشۡهُودٞ ١٠٣﴾ [هود: ١٠٣] 

“নিশ্চয় এতে রয়েছে নিদর্শন তার জন্য যে আখিরাতের ‘আযাবকে ভয় করে। সেটি এমন এক দিন, যেদিন সকল মানুষকে সমবেত করা হবে এবং সেটি এমন এক দিন, যেদিন সবাই হাযির হবে।”[১]

﴿قُلۡ إِنَّ ٱلۡأَوَّلِينَ وَٱلۡأٓخِرِينَ ٤٩ لَمَجۡمُوعُونَ إِلَىٰ مِيقَٰتِ يَوۡمٖ مَّعۡلُومٖ ٥٠﴾ [الواقعة: ٤٩،  ٥٠]

“বল, নিশ্চয় পূর্ববর্তীরা ও পরবর্তীরা, এক নির্ধারিত দিনের নির্দিষ্ট সময়ে অবশ্যই একত্র হবে।”[২]

﴿إِن كُلُّ مَن فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ إِلَّآ ءَاتِي ٱلرَّحۡمَٰنِ عَبۡدٗا ٩٣ لَّقَدۡ أَحۡصَىٰهُمۡ وَعَدَّهُمۡ عَدّٗا ٩٤ وَكُلُّهُمۡ ءَاتِيهِ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ فَرۡدًا ٩٥﴾ [مريم: ٩٣،  ٩٥] 

“আসমান ও জমিনে এমন কেউ নেই, যে বান্দা হিসেবে পরম করুণাময়ের কাছে হাযির হবে না। তিনি তাদের সংখ্যা জানেন এবং তাদেরকে যথাযথভাবে গণনা করে রেখেছেন।”[৩]

﴿وَيَوۡمَ نُسَيِّرُ ٱلۡجِبَالَ وَتَرَى ٱلۡأَرۡضَ بَارِزَةٗ وَحَشَرۡنَٰهُمۡ فَلَمۡ نُغَادِرۡ مِنۡهُمۡ أَحَدٗا ٤٧﴾ [الكهف: ٤٧] 

“আর যেদিন আমি পাহাড়কে চলমান করব এবং তুমি জমিনকে দেখতে পাবে দৃশ্যমান, আর আমি তাদেরকে একত্র করব, অতঃপর তাদের কাউকেই ছাড়ব না।”[৪] এখানে আল্লাহ যে একত্র করার কথা বলেছেন, তাতে জীব-জন্তুও শামিল, তাদেরকেও একত্র করা হবে।

শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়াহ রহ. বলেন: “অতঃপর জীব-জন্তুকেও সকল প্রকারসহ আল্লাহ তা’আলা সমবেত করবেন। কুরআন ও সুন্নাহ থেকে তাই প্রমাণিত হয়, যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَمَا مِن دَآبَّةٖ فِي ٱلۡأَرۡضِ وَلَا طَٰٓئِرٖ يَطِيرُ بِجَنَاحَيۡهِ إِلَّآ أُمَمٌ أَمۡثَالُكُمۚ مَّا فَرَّطۡنَا فِي ٱلۡكِتَٰبِ مِن شَيۡءٖۚ ثُمَّ إِلَىٰ رَبِّهِمۡ يُحۡشَرُونَ ٣٨﴾ [الانعام: ٣٨] 

“আর জমিনে বিচরণকারী প্রতিটি প্রাণী এবং দু’ডানা দিয়ে উড়ে এমন প্রতিটি পাখি, তোমাদের মত এক একটি উম্মত। আমরা কিতাবে কোনো ত্রুটি করি নি। অতঃপর তাদেরকে তাদের রবের কাছে সমবেত করা হবে।”[৫]

অপর স্থানে তিনি বলেন:

﴿وَإِذَا ٱلۡوُحُوشُ حُشِرَتۡ ٥﴾ [التكوير: ٥] 

“আর যখন বন্য পশুগুলোকে একত্র করা হবে।”[৬]

অপর স্থানে তিনি বলেন:

﴿وَمِنۡ ءَايَٰتِهِۦ خَلۡقُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ وَمَا بَثَّ فِيهِمَا مِن دَآبَّةٖۚ وَهُوَ عَلَىٰ جَمۡعِهِمۡ إِذَا يَشَآءُ قَدِيرٞ ٢٩﴾ [الشورى: ٢٩] 

“আর তার নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে আসমানসমূহ ও জমিনের সৃষ্টি এবং এতদোভয়ের মধ্যে তিনি যে সব জীব-জন্তু ছড়িয়ে দিয়েছেন সেগুলো। তিনি যখন ইচ্ছা তখনই এগুলোকে একত্র করতে সক্ষম।”[৭]

আরবি ভাষাবিদদের নিকট إذا অব্যয় সেখানেই ব্যবহার করা হয়, যা অবশ্যই সংগঠিত হবে। তাই উপরের আয়াতদ্বয়ে إذا অব্যয়ের ব্যবহার প্রমাণ করে, আল্লাহ তা‘আলা বন্য পশু ও জীব-জন্তুকে অবশ্যই সমবেত করবেন। এ অধ্যায়ের হাদীসগুলো প্রসিদ্ধ। যেমন একাদিক হাদীসে এসেছে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা জীব-জন্তুকে উপস্থিত করবেন এবং তাদের কারো থেকে কারো জন্য প্রতিশোধ গ্রহণ করবেন, অতঃপর তাদেরকে বলবেন: তোমরা মাটি হয়ে যাও, ফলে তারা মাটি হয়ে যাবে। তখন কাফিররা বলবে:

﴿يَٰلَيۡتَنِي كُنتُ تُرَٰبَۢا ٤٠﴾ [النبا: ٤٠] 

“হায়! আমি যদি মাটি হতাম।”[৮] আর যে বলে জীব-জন্তুকে পুনরায় জীবিত করা হবে না, সে এ ব্যাপারে ভুল বলেছে, কঠিন ভুল; বরং সে গোমরাহ অথবা কাফের। আল্লাহ ভালো জানেন।[৯] ইবন তাইমিয়ার কথা এখানে শেষ।

ইমাম আহমদ রহ. আবু যর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সূত্রে বর্ণনা করেন:

«أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ جَالِسًا ، وَشَاتَانِ تَعْتَلِفَان ، فَنَطَحَتْ إِحْدَاهُمَا الأُخْرَى فَأَجْهَضَتْهَا ، قَالَ : فَضَحِكَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، فَقِيلَ لَهُ : مَا يُضْحِكُكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ ؟ قَالَ : عَجِبْتُ لَهَا ، وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَيُقَادَنَّ لَهَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ . أي لَيُقْتَصَّنَّ لها».

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসা অবস্থায় ছিলেন, আর দু’টি বকরি ঘাস খাচ্ছিল, এমতাবস্থায় একটি বকরি অপর বকরিকে গুঁতো মারল ও তাকে ফেলে দিল। তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে দিলেন, তাকে বলা হল: হে আল্লাহর রাসূল, কিসে আপনাকে হাসাচ্ছে? তিনি বললেন: এ বকরিকে দেখে আশ্চর্য হলাম, যার হাতে আমার নফস তার কসম করে বলছি, কিয়ামতের দিন অবশ্যই তার জন্য প্রতিশোধ গ্রহণ করা হবে।”[১০] অর্থাৎ তার জন্য কিসাস গ্রহণ করা হবে। আহমদ শাকের বলেছেন: এ হাদীসের সনদ হাসান ও মুত্তাসিল।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সূত্রে ইমাম মুসলিম রহ. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«لَتُؤَدُّنَّ الْحُقُوقَ إِلَى أَهْلِهَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ حَتَّى يُقَادَ لِلشَّاةِ الْجَلْحَاءِ مِنْ الشَّاةِ الْقَرْنَاءِ»

“কিয়ামতের দিন অবশ্যই প্রত্যেক পাওনাদারকে তার পাওনা বুঝিয়ে দেওয়া হবে, এমনকি শিং-বিহীন বকরির জন্য শিং-ওয়ালা বকরি থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করা হবে।”[১১]

ইমাম নাওয়াওয়ী রহ. বলেন, “এ হাদীস স্পষ্ট প্রমাণ করে যে, কিয়ামতের দিন জীব-জন্তুগুলো উপস্থিত করা হবে এবং সাবালক মানুষদের ন্যায় তাদেরকেও কিয়ামতের দিন পুনরায় উত্থিত করা হবে, যেরূপ পুনরায় উত্থিত করা হবে বাচ্চা, পাগল এবং যাদের নিকট দাওয়াত পৌঁছেনি তাদেরকে। এ বিষয়ে কুরআন ও সুন্নাহ’য় বহু দলীল রয়েছে। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَإِذَا ٱلۡوُحُوشُ حُشِرَتۡ ٥﴾ [التكوير: ٥] 

“আর যখন বন্য পশুগুলো একত্র করা হবে।”[১২]

কুরআন ও হাদীসে কোনো শব্দ ব্যবহার হলে, যদি তার প্রকৃত অর্থ গ্রহণে বিবেক ও শরী‘আত বাধা না হয়, তাহলে তার প্রকৃত অর্থ গ্রহণ করা অবশ্য জরুরি। অতএব, এখানে যখন আল্লাহ বলেছেন, জীব-জন্তুকে উপস্থিত করা হবে, অবশ্যই তাদেরকে উপস্থিত করা হবে, (এতে রূপক অর্থ কিংবা সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই)।

আলিমগণ বলেছেন: কিয়ামতের দিন সমবেত ও পুনরুত্থান করা হলে অবশ্যই প্রতিদান, শাস্তি ও সাওয়াব দেওয়া হবে এরূপ জরুরি নয়। অতএব, শিং-ওয়ালা বকরি থেকে শিং-বিহীন বকরির জন্য প্রতিশোধ গ্রহণ করা মানুষের থেকে মানুষের জন্য প্রতিশোধ গ্রহণ করার মত নয়। কারণ, মানুষের ওপর যেরূপ শরী‘আত অবধারিত ছিল তাদের ওপর সেরূপ ছিল না। তাই জীব-জন্তু থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করার অর্থ, তাদের মাঝে ন্যায়-অন্যায় বিচার করে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা ও একে অপরের দেনা-পাওনা সমান করে দেওয়া। আল্লাহ ভালো জানেন।”[১৩] ইমাম নাওয়াওয়ী রহ.-এর কথা এখানে শেষ।

কিয়ামতের দিন বান্দাদেরকে খালি পা, উলঙ্গ শরীর ও খতনা বিহীন উপস্থিত করা হবে। ইমাম বুখারী রহ. ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা সূত্রে বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«إِنَّكُمْ مَحْشُورُونَ حُفَاةً عُرَاةً غُرْلا»

“নিশ্চয় তোমাদেরকে উপস্থিত করা হবে খালি পা, উদোম শরীর ও খতনা বিহীন অবস্থায়। অতঃপর তিনি তিলাওয়াত করেন:

﴿كَمَا بَدَأۡنَآ أَوَّلَ خَلۡقٖ نُّعِيدُهُۥۚ وَعۡدًا عَلَيۡنَآۚ إِنَّا كُنَّا فَٰعِلِينَ ١٠٤﴾ [الانبياء: ١٠٤] 

“যেভাবে আমরা প্রথম সৃষ্টির সূচনা করেছিলাম সেভাবেই পুনরায় সৃষ্টি করব। ওয়াদা পালন করা আমাদের কর্তব্য, আমরা তা পালন করবই।”[১৪]

«وَأَوَّلُ مَنْ يُكْسَى يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِبْرَاهِيمُ وَإِنَّ أُنَاسًا مِنْ أَصْحَابِي يُؤْخَذُ بِهِمْ ذَاتَ الشِّمَالِ فَأَقُولُ أَصْحَابِي أَصْحَابِي فَيَقُولُ إِنَّهُمْ لَمْ يَزَالُوا مُرْتَدِّينَ عَلَى أَعْقَابِهِمْ مُنْذُ فَارَقْتَهُمْ فَأَقُولُ كَمَا قَالَ الْعَبْدُ الصَّالِحُ»

“কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে কাপড় পরিধান করানো হবে। আর আমার সাথীদের কতক লোককে বাম পার্শ্ব দিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে, তখন আমি বলব: আমার সাথীগণ আমার সাথীগণ, ফলে তিনি (আল্লাহ) বলবেন: তুমি তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর তারা তাদের পশ্চাতে ফিরে গেছে, তখন আমি বলব, যেরূপ আল্লাহর নেক বান্দা বলেছেন:

﴿مَا قُلۡتُ لَهُمۡ إِلَّا مَآ أَمَرۡتَنِي بِهِۦٓ أَنِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ رَبِّي وَرَبَّكُمۡۚ وَكُنتُ عَلَيۡهِمۡ شَهِيدٗا مَّا دُمۡتُ فِيهِمۡۖ فَلَمَّا تَوَفَّيۡتَنِي كُنتَ أَنتَ ٱلرَّقِيبَ عَلَيۡهِمۡۚ وَأَنتَ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ شَهِيدٌ ١١٧ إِن تُعَذِّبۡهُمۡ فَإِنَّهُمۡ عِبَادُكَۖ وَإِن تَغۡفِرۡ لَهُمۡ فَإِنَّكَ أَنتَ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡحَكِيمُ ١١٨﴾ [المائ‍دة: ١١٧،  ١١٨] 

“আমি তাদেরকে কেবল তাই বলেছি, যা আপনি আমাকে আদেশ করেছেন যে, তোমরা আমার রব তোমাদের রব আল্লাহর ইবাদত কর। আর যতদিন আমি তাদের মধ্যে ছিলাম ততদিন আমি তাদের উপর সাক্ষী ছিলাম। অতঃপর যখন আপনি আমাকে উঠিয়ে নিলেন তখন আপনি ছিলেন তাদের পর্যবেক্ষণকারী। আর আপনি সব কিছুর উপর সাক্ষী। যদি আপনি তাদেরকে শাস্তি প্রদান করেন, তবে তারা আপনারই বান্দা, আর তাদেরকে যদি ক্ষমা করেন, তবে নিশ্চয় আপনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।”[১৫] ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর হাদীস এখানে শেষ।[১৬]

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«تُحْشَرُونَ حُفَاةً عُرَاةً غُرْل»

“তোমাদেরকে খালি পা, উলঙ্গ শরীর ও খতনা বিহীন উপস্থিত করা হবে।” আয়েশা বলেন: আমি বললাম হে আল্লাহর রাসূল, পুরুষ ও নারীগণ পরস্পর পরস্পরের দিকে দেখবে! তিনি বললেন: এ বিষয়টি তাদেরকে আকৃষ্ট করার চেয়েও পরিস্থিতি কঠিন হবে।”[১৭]

অপর হাদীসে এসেছে, মানুষকে সে কাপড়েই উত্থিত করা হবে, যে কাপড়ে সে মারা যায়। যেমন, আবু সায়িদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সম্পর্কে আছে, যখন তার নিকট মৃত্যু উপস্থিত হলো, তিনি নতুন কাপড় তলব করলেন এবং তা পরিধান করলেন, অতঃপর বললেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: নিশ্চয় মৃত ব্যক্তিকে সে কাপড়েই উত্থিত করা হবে, যে কাপড়ে সে মারা যায়।”[১৮] আলবানী রহ. সহীহ হাদীস সমগ্রে এ হাদীসকে সহীহ বলেছেন।[১৯]

এ হাদীসের সাথে পূর্বের  হাদীসের অমিল দেখা যায়, উভয় প্রকার হাদীসে সামঞ্জস্য বিধানের জন্য আলেমগণ একাধিক উত্তর দিয়েছেন, নিম্নে কয়েকটি উল্লেখ করছি:
১. প্রথমে তাদেরকে তাদের কাপড়ে উঠানো হবে, অতঃপর কাপড় পুরনো হবে, যখন তারা হাশরের ময়দানে উপস্থিত হবে তখন সবাই উলঙ্গ থাকবে।
২. প্রথম তাদেরকে উলঙ্গ উঠানো হবে, অতঃপর নবীদেরকে কাপড় পরিধান করানো হবে, অতঃপর সিদ্দিক ও তাদের পরবর্তীদের কাপড় পরিধান করানো হবে, প্রত্যেককে সে জাতীয় কাপড় পরিধান করানো হবে, যে জাতীয় কাপড়ে সে মারা যাবে।
৩. কতক আলিম এ হাদীসকে শহীদদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বলেছেন। কারণ, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে তাদের সে কাপড়ে দাফন করতে বলেছেন যে কাপড়ে তারা মারা যায়।” অন্যদের থেকে আলাদা করে তাদেরকে তাদের কাপড়ে উঠানো হবে।
৪. এখানে কাপড় দ্বারা উদ্দেশ্য নেক আমল। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

﴿وَلِبَاسُ ٱلتَّقۡوَىٰ ذَٰلِكَ خَيۡرٞۚ ٢٦﴾ [الاعراف: ٢٦]

“আর তাকওয়ার পোশাক, তা উত্তম।”[২০]

অন্যত্র তিনি বলেন,

﴿وَثِيَابَكَ فَطَهِّرۡ ٤﴾ [المدثر: ٤]

“আর তোমার পোশাক পবিত্র কর।”[২১] অর্থাৎ প্রত্যেক ব্যক্তিকে সে আমলে উঠানো হবে, যার উপর সে মারা গেছে, যদি ভালো হয় তাহলে ভালো, আর যদি খারাপ হয় তাহলে খারাপ। তার প্রমাণ জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হাদীস, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি:

«يُبْعَثُ كُلُّ عَبْدٍ عَلَى مَا مَاتَ عَلَيْهِ»

“প্রত্যেক বান্দাকে তার উপরই উঠানো হবে, যার ওপর সে মারা গেছে।”[২২]

ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«إِذَا أَنْزَلَ اللَّهُ بِقَوْمٍ عَذَابًا أَصَابَ الْعَذَابُ مَنْ كَانَ فِيهِمْ ثُمَّ بُعِثُوا عَلَى أَعْمَالِهِمْ»

“আল্লাহ যখন কোনো কওমের ওপর ‘আযাব নাযিল করেন, তখন তাদের মধ্যে যে থাকবে তাকেই স্পর্শ করবে, অতঃপর তাদেরকে তাদের আমলের উপর উঠানো হবে।”[২৩]

ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: একদা জনৈক ব্যক্তি আরাফার ময়দানে অবস্থান করছিল, হঠাৎ সে তার বাহন থেকে পড়ে গেল, আর (উট) বাহনটি তাকে মাড়িয়ে দিল। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন:

«اغْسِلُوهُ بِمَاءٍ وَسِدْرٍ وَكَفِّنُوهُ فِي ثَوْبَيْنِ وَلا تُحَنِّطُوهُ وَلا تُخَمِّرُوا رَأْسَهُ فَإِنَّهُ يُبْعَثُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مُلَبِّيًا»

“তাকে পানি ও বরই পাতা দিয়ে গোসল দাও এবং তাক দু’টি কাপড়ে কাফন দাও, তাকে সুগন্ধি দিয়ো না এবং তার মাথাও ঢাকিয়ো না; কারণ, কিয়ামতের দিন তাকে তালবিয়া পাঠ করা অবস্থায় উঠানো হবে।”[২৪]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«كُلُّ كَلْمٍ يُكْلَمُهُ الْمُسْلِمُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ يَكُونُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ كَهَيْئَتِهَا إِذْ طُعِنَتْ تَفَجَّرُ دَمًا اللَّوْنُ لَوْنُ الدَّمِ وَالْعَرْفُ عَرْفُ الْمِسْكِ»

“আল্লাহর রাস্তায় মুসলিম যে সকল জখমের সম্মুখীন হয়, তার প্রত্যেক জখম কিয়ামতের দিন অবিকল অবস্থায় থাকবে, যদি তাকে বর্শা দ্বারা আঘাত করা হয়, তাহলে রক্ত প্রবাহিত করবে, রং রক্তের রং-ই হবে, কিন্তু গন্ধ হবে মিশকের গন্ধ।”[২৫]

ইবনে হাজার রহ. বলেন: “তাই মুমূর্ষু ব্যক্তিদের لا إله إلا الله শিক্ষা দেওয়া মুস্তাহাব, যেন এটাই তার দুনিয়ার সর্বশেষ বাক্য হয়, তাহলে এ বাক্যসহ তাকে কিয়ামতের দিন উঠানো হবে।[২৬]

উল্লেখ্য, সে দিন মানুষদেরকে এ মাটি ব্যতীত অন্য কোনো মাটিতে উঠানো হবে, যার বিশেষ বৈশিষ্ট্য থাকবে, বিভিন্ন হাদীসে তার বর্ণনা এসেছে। যেমন, সাহাল ইবন সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি:

«يُحْشَرُ النَّاسُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى أَرْضٍ بَيْضَاءَ عَفْرَاءَ كَقُرْصَةِ نَقِيٍّ»

“কিয়ামতের দিন মানুষদেরকে গোলাকার পরিচ্ছন্ন রুটির ন্যায় সাদা ধবধবে জমিনে উপস্থিত করা হবে।” সাহাল কিংবা অপর কোনো রাবি বলেছেন: সেখানে কারো কোনো নিদর্শন থাকবে না।[২৭] আল্লাহ ভালো জানেন।

সূত্র: الإسلام سؤال وجواب

  1. [১]সূরা হূদ, আয়াত: ১০৩।
  2. [২]সূরা আল-ওয়াকি‘আহ, আয়াত: ৪৯-৫০।
  3. [৩]সূরা মারইয়াম, আয়াত: ৯৩-৯৫।
  4. [৪]সূরা আল-কাহাফ, আয়াত: ৪৭।
  5. [৫]সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ৩৮।
  6. [৬]সূরা আত-তাকওয়ীর, আয়াত: ৫।
  7. [৭]সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ২৯।
  8. [৮]সূরা আন-নাবা, আয়াত: ৪০।
  9. [৯]মাজমুউল ফতোয়া: (৪/২৪৮)।
  10. [১০]আহমদ, হাদীস নং ২০৫৩৪।
  11. [১১]মুসলিম, হাদীস নং ২৫৮২।
  12. [১২]সূরা আত-তাকওয়ীর, আয়াত: ৫।
  13. [১৩]দেখুন: ইমাম নাওয়াওয়ী রাহিমাহুল্লাহ কর্তৃক মুসলিমের ব্যাখ্যা গ্রন্থ, হাদীস নং ২৫৮২।
  14. [১৪]সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ১০৪।
  15. [১৫]সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ১১৭-১১৯।
  16. [১৬]সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৩৪৯।
  17. [১৭]সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৫২৭।
  18. [১৮]আবু দাউদ, হাদীস নং ৩১১৪।
  19. [১৯]দেখুন: সিলসিলাতুস সাহিহাহ, হাদীস নং ১৬৭১।
  20. [২০]সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ২৬।
  21. [২১]সূরা আল-মুদ্দাসসির, আয়াত: ৪।
  22. [২২]সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৮৭৮।
  23. [২৩]সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭১০৮।
  24. [২৪]সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১২৬৫।
  25. [২৫]সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৩।
  26. [২৬]দেখুন: ফাতহুল বারি: (১১/৩৮৩)।
  27. [২৭]সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৫২১।
Share on