bn বাংলা
বাংলা বাংলা
English English
عربي عربي


+8801575-547999
সকাল ৯টা হতে রাত ১০টা
Community Welfare Initiative

মদিনায় গমনকারীদের মারফতে রাসূল ﷺ-এর জন্য সালাম পাঠানোর বিধান

প্রশ্ন: হাজীদের যারা মদিনায় গমন করেন তাদের মারফতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য সালাম প্রেরণের বিধান কী?

উত্তর: আল-হামদুলিল্লাহ।
এ কাজটি শরী‘আতসম্মত নয়। এ ধরণের আমলের প্রচলন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে ছিল না এবং মুসলিম আলেমরা এ ধরনের কোনো আমল করেছেন তার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় নি। কারণ, যেকোনো মুসলিমের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর সালাম দেওয়া, দুনিয়ার যেকোনো স্থান হতেই সম্ভব। আর আল্লাহ তা‘আলা দায়িত্ব নিয়েছেন যে, তিনি এ সালাত ও সালামকে তার ফিরিশতাদের মাধ্যমে পৌঁছে দেবেন, যাদের তিনি এ দায়িত্বেই নিয়োজিত করেছেন। মনে রাখতে হবে, যেকোনো ব্যক্তি যে কোনো স্থান থেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর সালাম দেবে, তার সালাম অবশ্যই পৌঁছানো হবে, এতে কোনোরূপ সন্দেহ-সংশয়ের অবকাশ নেই। সুতরাং মদিনা মুনাওয়ারা যিয়ারতকারীকে সালাম পৌঁছানোর দায়িত্ব দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। তার সম্পর্কে নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারবে না যে, সে কি পৌঁছতে পারবে নাকি পথে মারা যাবে অথবা সে কি ভুলে যাবে নাকি নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাবে?

আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, পৃথিবীতে আল্লাহর কতক ভ্রমণকারী ফিরিশতা রয়েছে, তারা আমার উম্মতের সালাম আমার নিকট পৌঁছে দেয়।[১]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা তোমাদের ঘরসমূহকে কবর বানাবে না, আর আমার কবরকে উৎসবের স্থানে পরিণত করবে না। আর আমার ওপর দুরূদ পাঠ কর। কারণ, তোমাদের সালাত আমার নিকট পৌঁছানো হয়, তোমরা যেখানেই থাকো না কেন।[২]

আল-লাজনা আদ-দায়িমার আলেমগণ বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিংবা অন্য কোনো মৃত ব্যক্তিকে সালাম পৌঁছানোর জন্য অন্য কাউকে দায়িত্ব দেওয়া শরী‘আত অনুমোদিত নয়; বরং বিদ‘আত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সকল বিদ‘আতই গোমরাহী, আর সব গোমরাহীর শেষ পরিণতি জাহান্নাম।

সুতরাং আমাদের কর্তব্য হলো, এ ধরনের কাজ হতে বিরত থাকা এবং যারা এ ধরনের কাজ করে তাদের সতর্ক করা এবং জানিয়ে দেওয়া যে, এটি শরী‘আতসম্মত নয়। যাতে তারা এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকে। আমাদের ওপর আল্লাহর রহমত ও মহা করুণা যে, তিনি আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দেওয়া আমাদের সালামকে তাঁর নিকট পৌঁছিয়ে দেন। পৃথিবীর পশ্চিম প্রান্ত কিংবা পূর্ব প্রান্ত যেখান থেকেই আমরা সালাম দেই না কেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত, তিনি বলেন, পৃথিবীতে ভ্রমণকারী আল্লাহর কতক ফিরিশতা রয়েছে, তারা আমার উম্মতের সালাম আমার নিকট পৌঁছে দেয়। (বর্ণনায়, ইমাম আহমাদ, নাসাঈ ও অন্যান্যরা)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, তোমাদের সর্বত্তোম দিন হলো জুমু‘আর দিন, তাই তোমরা ঐ দিনে আমার ওপর বেশি বেশি করে দুরূদ পাঠ করবে। কারণ, তোমাদের দুরূদ আমার নিকট পৌঁছানো হয়, তোমরা যেখানেই থাকো না কেন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, তোমরা আমার কবরকে উৎসবের জায়গা বানাবে না এবং নিজেদের ঘরকে কবর বানাবে না। আর তোমরা আমার ওপর দুরূদ পড়বে। কারণ, তোমাদের দুরূদ আমার নিকট পৌঁছানো হয়, তোমরা যেখানেই থাক না কেন?

এ সম্পর্কে আরো বহু হাদীস বর্ণিত হয়েছে।

(শায়খ আব্দুল আযীয ইবন বায, শাইখ আব্দুল আযীয আলে শাইখ, শাইখ ছালেহ আল-ফাওযান এবং বকর আবু যায়েদ। ফাতওয়া আল-লাজনা আদ-দায়েমাহ ৩০, ২৯/১৬)

মুহাম্মদ ইবন সউদ ইসলামি ইউনিভার্সিটির শিক্ষাবিভাগের সদস্য, শাইখ আব্দুর রহমান ইবন নাসের আল-বাররাক বলেন, মদিনায় সফরকারী ব্যক্তির মাধ্যমে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট সালাম পাঠানোর কোনো প্রমাণ নেই। সাহাবায়ে কেরাম, সালাফে সালেহীন, তাবেঈন এবং আহলে ইলমদের কারোরই এ অভ্যাস ছিল না। তারা কেউ অপরের মাধ্যমে নবীর ওপর সালাম পাঠাতেন না এবং তাদের কারো হতেই এ ধরনের কোনো বর্ণনা পাওয়া যায় না। কারণ, রাসূল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি উম্মতের দেওয়া সালাম ও দুরূদ কোনো মাধ্যম ছাড়া এমনিতেই পৌঁছানো হয়ে থাকে। যেমন, সহীহ হাদীসে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা তোমাদের ঘরকে কবর  বানিও না, আর আমার কবরকে উৎসব উদযাপনের জায়গায় পরিণত করো না। আমার ওপর দুরূদ পড়, তোমাদের দুরূদ আমার নিকট পৌঁছানো হয় তোমরা যেখানেই থাক না কেন।[৩]

এর ওপর ভিত্তি করে বলা যায়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি অন্যের মাধ্যমে সালাম পাঠানোর ইবাদাতটি সম্পূর্ণ বিদ‘আত বরং মৃত ব্যক্তির প্রতি সালাম পাঠানোর কোনো বিধান শরী‘আতসম্মত নয়। মৃত ব্যক্তির ওপর সেই পাঠাবে যে তার কবর যিয়ারত করবে। যেমন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাকী‘ কবরস্থান যিয়ারত করতেন, তাদের সালাম দিতেন এবং তাদের জন্য দো‘আ করতেন। তিনি তার সাহাবীগণকে শিখিয়ে দিতেন, তোমরা কবর যিয়ারত কালে এভাবে বলবে,

«السَّلامُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ مِنْ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ لَلاحِقُونَ ، أَسْأَلُ اللَّهَ لَنَا وَلَكُمْ الْعَافِيَةَ»

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে বলেন, তুমি বল,

«السَّلامُ عَلَى أَهْلِ الدِّيَارِ مِنْ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ ، وَيَرْحَمُ اللَّهُ الْمُسْتَقْدِمِينَ مِنَّا وَالْمُسْتَأْخِرِينَ ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لَلاحِقُونَ»

তবে অনুপস্থিত জীবিত ব্যক্তির জন্য সালাম পাঠানোতে কোনো অসুবিধা নেই। তার জন্য অপরের মাধ্যমে সালাম পাঠানো জায়েয আছে।

মোটকথা: আল্লাহ তা‘আলা এ উম্মতের ওপর খুশি হন, যখন তারা তাদের নবীর ওপর দুরূদ ও সালাম পাঠ করে। আর তারা যত বেশি এ আমল করে, আল্লাহ তা‘আলা ততবেশি খুশি হন। হাদীসে বর্ণিত আছে, আল্লাহ তা‘আলা তার কবরে কিছু ফিরিশতা নিয়োগ করেছেন তারা তাঁর উম্মতের পক্ষ থেকে তাদের সালাত ও সালাম তার নিকট পৌছায়।

আল্লহই ভালো জানেন।

শাইখ মুহাম্মাদ ইবন উসাইমিন রহ. বলেন, তা সত্বেও আমরা বলি, আর যদি তুমি তার ওপর দুনিয়ার সর্বশেষ প্রান্ত থেকেও সালাম পাঠাও তবে তোমাদের সালাম তার নিকট পৌঁছবে। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা পৃথিবীতে বিচরণকারী কিছু ফিরিশতাদের নিয়োজিত করেছেন, যখন তোমাদের কেউ রাসূলের ওপর সালাম পাঠায়, তারা সে সালাম রাসূলের নিকট পৌঁছে দেয়।

সূতরাং আমরা যদি এখন বলি, اللهم صلِّ وسلِّم على رسول الله আমাদের এ সালামকে তাঁর নিকট পৌঁছানো হবে। সালাতে আমরা বলে থাকি, السلام عليك أيها النبي ورحمة الله وبركاته তখনো আমাদের সালাম তাঁর নিকট পৌঁছানো হয়।

আমি মদিনাতে অনেক মানুষকে বলতে শুনেছি, আমার পিতা আমাকে অসীয়ত করেছেন, যাতে আমি রাসূলের ওপর সালাম প্রেরণ করি। তিনি আমাকে বলেন, আমার পক্ষ থেকে রাসূলের ওপর সালাম পাঠ করবে। এটি সর্ম্পূণ ভুল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবিত নন, তাহলে জীবিত ব্যক্তির সালামের ন্যায় তাঁর নিকট প্রেরণ করা যেত! আর যদি তোমার পিতা রাসূলের ওপর সালাম দিয়ে থাকেন, তার সালাম পৌঁছানোর জন্য তোমার চেয়ে বেশি ক্ষমতা সম্পন্ন এবং তোমার চেয়ে অধিক বিশ্বাসী রয়েছে যারা তোমার পিতার সালামকে রাসূলের প্রতি পৌঁছাবে। আর তারা হলো আল্লাহর নিয়োজিত ফেরেশতাবৃন্দ।

সুতরাং এর কোনো প্রয়োজন নেই যে, তুমি কারো মাধ্যমে সালাম পাঠাবে। আমরা বলি, তুমি তোমার জায়গা হতে অথবা দুনিয়ার যেকোনো জায়গা থেকে বলবে, السلام عليك أيها النبي এটি অতিদ্রুত ও সুন্দরভাবে তার নিকট পৌছানো হবে, তাতে কোনো প্রকার সন্দেহ-সংশয়ের অবকাশ নেই।

আল্লাহই ভালো জানেন।

সূত্র: ইলমী গবেষণা এবং ফাতাওয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটি

  1. [১]নাসাঈ, হাদীস নং ১২৮২;‌‌ শাইখ আলবা‌নী সহীহ তারগীবে (১৬৬৪) হাদীসটিকে সহীহ আখ্যায়িত করেছেন।
  2. [২]আবু দাউদ, হাদীস নং ২০৪২; আল্লামা আলবানী হাদসটিকে সহীহ আল-জামে‘তে (৭২২৬) সহীহ বলে মন্তব্য করেছেন।
  3. [৩]আবু দাউদ, হাদীস নং ২০৪২।
Share on