bn বাংলা
বাংলা বাংলা
English English
عربي عربي


+8801575-547999
সকাল ৯টা হতে রাত ১০টা
Community Welfare Initiative

আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা সম্পর্কে খারাপ মন্তব্যের বিধান

আল্লাহ তা’আলা সাত আসমানের উপর থেকে কুরআনে কারীমে আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহার পবিত্রতা ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ তা’আলা সৃরা আন নূর এর ১১-২৬ মোট ১৫ টি আয়াতে আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহার পবিত্রতা ঘোষণা করে বলেন,

﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ جَآءُو بِٱلۡإِفۡكِ عُصۡبَةٞ مِّنكُمۡۚ لَا تَحۡسَبُوهُ شَرّٗا لَّكُمۖ بَلۡ هُوَ خَيۡرٞ لَّكُمۡۚ لِكُلِّ ٱمۡرِيٕٖ مِّنۡهُم مَّا ٱكۡتَسَبَ مِنَ ٱلۡإِثۡمِۚ وَٱلَّذِي تَوَلَّىٰ كِبۡرَهُۥ مِنۡهُمۡ لَهُۥ عَذَابٌ عَظِيمٞ ١١ لَّوۡلَآ إِذۡ سَمِعۡتُمُوهُ ظَنَّ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ وَٱلۡمُؤۡمِنَٰتُ بِأَنفُسِهِمۡ خَيۡرٗا وَقَالُواْ هَٰذَآ إِفۡكٞ مُّبِينٞ ١٢ لَّوۡلَا جَآءُو عَلَيۡهِ بِأَرۡبَعَةِ شُهَدَآءَۚ فَإِذۡ لَمۡ يَأۡتُواْ بِٱلشُّهَدَآءِ فَأُوْلَٰٓئِكَ عِندَ ٱللَّهِ هُمُ ٱلۡكَٰذِبُونَ ١٣ وَلَوۡلَا فَضۡلُ ٱللَّهِ عَلَيۡكُمۡ وَرَحۡمَتُهُۥ فِي ٱلدُّنۡيَا وَٱلۡأٓخِرَةِ لَمَسَّكُمۡ فِي مَآ أَفَضۡتُمۡ فِيهِ عَذَابٌ عَظِيمٌ ١٤ إِذۡ تَلَقَّوۡنَهُۥ بِأَلۡسِنَتِكُمۡ وَتَقُولُونَ بِأَفۡوَاهِكُم مَّا لَيۡسَ لَكُم بِهِۦ عِلۡمٞ وَتَحۡسَبُونَهُۥ هَيِّنٗا وَهُوَ عِندَ ٱللَّهِ عَظِيمٞ ١٥ وَلَوۡلَآ إِذۡ سَمِعۡتُمُوهُ قُلۡتُم مَّا يَكُونُ لَنَآ أَن نَّتَكَلَّمَ بِهَٰذَا سُبۡحَٰنَكَ هَٰذَا بُهۡتَٰنٌ عَظِيمٞ ١٦ يَعِظُكُمُ ٱللَّهُ أَن تَعُودُواْ لِمِثۡلِهِۦٓ أَبَدًا إِن كُنتُم مُّؤۡمِنِينَ ١٧ وَيُبَيِّنُ ٱللَّهُ لَكُمُ ٱلۡأٓيَٰتِۚ وَٱللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ ١٨ إِنَّ ٱلَّذِينَ يُحِبُّونَ أَن تَشِيعَ ٱلۡفَٰحِشَةُ فِي ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٞ فِي ٱلدُّنۡيَا وَٱلۡأٓخِرَةِۚ وَٱللَّهُ يَعۡلَمُ وَأَنتُمۡ لَا تَعۡلَمُونَ ١٩ وَلَوۡلَا فَضۡلُ ٱللَّهِ عَلَيۡكُمۡ وَرَحۡمَتُهُۥ وَأَنَّ ٱللَّهَ رَءُوفٞ رَّحِيمٞ ٢٠ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تَتَّبِعُواْ خُطُوَٰتِ ٱلشَّيۡطَٰنِۚ وَمَن يَتَّبِعۡ خُطُوَٰتِ ٱلشَّيۡطَٰنِ فَإِنَّهُۥ يَأۡمُرُ بِٱلۡفَحۡشَآءِ وَٱلۡمُنكَرِۚ وَلَوۡلَا فَضۡلُ ٱللَّهِ عَلَيۡكُمۡ وَرَحۡمَتُهُۥ مَا زَكَىٰ مِنكُم مِّنۡ أَحَدٍ أَبَدٗا وَلَٰكِنَّ ٱللَّهَ يُزَكِّي مَن يَشَآءُۗ وَٱللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٞ ٢١ وَلَا يَأۡتَلِ أُوْلُواْ ٱلۡفَضۡلِ مِنكُمۡ وَٱلسَّعَةِ أَن يُؤۡتُوٓاْ أُوْلِي ٱلۡقُرۡبَىٰ وَٱلۡمَسَٰكِينَ وَٱلۡمُهَٰجِرِينَ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِۖ وَلۡيَعۡفُواْ وَلۡيَصۡفَحُوٓاْۗ أَلَا تُحِبُّونَ أَن يَغۡفِرَ ٱللَّهُ لَكُمۡۚ وَٱللَّهُ غَفُورٞ رَّحِيمٌ ٢٢ إِنَّ ٱلَّذِينَ يَرۡمُونَ ٱلۡمُحۡصَنَٰتِ ٱلۡغَٰفِلَٰتِ ٱلۡمُؤۡمِنَٰتِ لُعِنُواْ فِي ٱلدُّنۡيَا وَٱلۡأٓخِرَةِ وَلَهُمۡ عَذَابٌ عَظِيمٞ ٢٣ يَوۡمَ تَشۡهَدُ عَلَيۡهِمۡ أَلۡسِنَتُهُمۡ وَأَيۡدِيهِمۡ وَأَرۡجُلُهُم بِمَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ٢٤ يَوۡمَئِذٖ يُوَفِّيهِمُ ٱللَّهُ دِينَهُمُ ٱلۡحَقَّ وَيَعۡلَمُونَ أَنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلۡحَقُّ ٱلۡمُبِينُ ٢٥ ٱلۡخَبِيثَٰتُ لِلۡخَبِيثِينَ وَٱلۡخَبِيثُونَ لِلۡخَبِيثَٰتِۖ وَٱلطَّيِّبَٰتُ لِلطَّيِّبِينَ وَٱلطَّيِّبُونَ لِلطَّيِّبَٰتِۚ أُوْلَٰٓئِكَ مُبَرَّءُونَ مِمَّا يَقُولُونَۖ لَهُم مَّغۡفِرَةٞ وَرِزۡقٞ كَرِيمٞ ٢٦

অর্থাৎ

﴿١١ নিশ্চয়ই যারা এই মিথ্যাচার এনেছে, তারা তোমাদেরই (মুসলিমদের মাঝে অবস্থান করা) একটি দল। তোমরা একে তোমাদের জন্য মন্দ মনে কোরো না; বরং এটি তোমাদের জন্য কল্যাণকর। তাদের প্রত্যেকের জন্য রয়েছে তার কৃত অপরাধ অনুযায়ী শাস্তি। আর যে তাদের মধ্যে এর বড় অংশের দায়িত্ব নিয়েছিল, তার জন্য রয়েছে মহাশাস্তি।
﴿١٢ তোমরা যখন এটি শুনেছিলে, তখন কেন ঈমানদার পুরুষ ও নারী নিজের ভাই-বোনদের সম্পর্কে ভালো ধারণা পোষণ করল না এবং বলল না: ‘এটা তো স্পষ্ট অপবাদ’?
﴿١٣ তারা কেন এর পক্ষে চারজন সাক্ষী উপস্থিত করল না? যদি তারা সাক্ষী না আনতে পারে, তাহলে তারা আল্লাহর কাছে অবশ্যই মিথ্যাবাদী।
﴿١٤ যদি দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া তোমাদের প্রতি না থাকত, তবে তোমরা যা নিয়ে ব্যস্ত হয়েছিলে, সে কারণে অবশ্যই তোমাদের উপর এক মহাশাস্তি আপতিত হতো।
﴿١٥ যখন তোমরা এটি মুখে মুখে প্রচার করছিলে এবং এমন কথা বলছিলে যার সম্পর্কে তোমাদের কোনো জ্ঞান ছিল না, তোমরা একে (এভাবে মিথ্যাচার ছড়ানোকে) তুচ্ছ ভাবছিলে, অথচ আল্লাহর কাছে এটি ছিল অত্যন্ত গুরুতর।
﴿١٦ তোমরা যখন এটি শুনেছিলে, তখন কেন বললে না: ‘আমাদের পক্ষে এটি বলা উচিত নয়! আপনি (হে আল্লাহ!) পবিত্র! এটা তো এক জঘন্য অপবাদ!’
﴿١٧ আল্লাহ তোমাদের উপদেশ দেন যাতে তোমরা কখনো এর পুনরাবৃত্তি না করো, যদি তোমরা মু’মিন হও।
﴿١٨ আল্লাহ তোমাদের জন্য নিদর্শনসমূহ পরিষ্কার করে ব্যাখ্যা করেন, আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
﴿١٩ যারা চায় যে ঈমানদারদের মাঝে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ুক, তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আল্লাহ জানেন, কিন্তু তোমরা জানো না।
﴿٢٠ যদি আল্লাহর অনুগ্রহ ও করুণা তোমাদের উপর না থাকত, আর আল্লাহ না হতেন দয়ারু ও পরম দয়ালু—তবে (তোমরা ধ্বংস হয়ে যেতে)!
﴿٢١ হে ঈমানদারগণ! শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। যে কেউ শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে, সে তো অশ্লীলতা ও গোনাহর আদেশই দেয়। যদি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া তোমাদের উপর না থাকত, তাহলে তোমাদের কেউ কখনোই পবিত্র হতে পারতে না। কিন্তু আল্লাহ যাকে ইচ্ছা, পবিত্র করে দেন। আর আল্লাহ শ্রবণকারী, জ্ঞাত।
﴿٢٢ তোমাদের মধ্যে যাদের প্রাচুর্য ও প্রশান্তি রয়েছে, তারা যেন শপথ না করেন যে তারা আত্মীয়-স্বজন, মিসকীন ও আল্লাহর পথে হিজরতকারীকে কিছু দেবে না। তারা যেন ক্ষমা করে এবং উপেক্ষা করে। তোমরা কি পছন্দ করো না যে, আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন? আর আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
﴿٢٣ যারা সচ্চরিত্র, সরলমনা, ঈমানদার নারীদের অপবাদ দেয়—তারা দুনিয়া ও আখিরাতে অভিশপ্ত, আর তাদের জন্য রয়েছে মহাশাস্তি।
﴿٢٤ সেদিন তাদের মুখ, হাত ও পা সাক্ষ্য দেবে, তারা যা করত সে সম্পর্কে।
﴿٢٥ সেদিন আল্লাহ তাদের প্রকৃত বিচার দিবেন এবং তারা জানতে পারবে যে, আল্লাহই পরিপূর্ণ সত্য—পরিষ্কারভাবে প্রকাশিত।
﴿٢٦ খারাপ নারীরা খারাপ পুরুষদের জন্য, এবং খারাপ পুরুষরা খারাপ নারীদের জন্য। আর উত্তম নারীরা উত্তম পুরুষদের জন্য এবং উত্তম পুরুষরা উত্তম নারীদের জন্য। তারা (অর্থাৎ ভালোরা) যেসব অপবাদ দিচ্ছে, তা থেকে মুক্ত। তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা এবং সম্মানজনক রিযিক।

এই আয়াতসমূহে মুনাফিকদের ছড়ানো অপবাদের বিরুদ্ধে আয়েশা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)-এর নির্দোষতা কুরআনের পক্ষ থেকে চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত হয়েছে। যারা এই অপবাদে বিশ্বাস করে, তারা কুরআনের সরাসরি বিরোধিতা করে, যা কাফেরদের শামিল করে দেয় বলে ওলামায়ে কেরামের সর্বসম্মত মত।

ইমাম মালিক ইবন আনাস রহিমাহুল্লাহ বলেছেন:

“যে ব্যক্তি আবু বকর ও উমার রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমাকে গাল দেয়, তাকে বেত্রাঘাত করা হবে; আর যে আয়েশা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)-কে গাল দেয়, তাকে হত্যা করা হবে।”
তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলো: ‘আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহাকে গালি দিলে কেন হত্যা করা হবে?’
তিনি রাহিমাহুল্লাহ উত্তরে বললেন: কারণ আল্লাহ তা‘আলা আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা সম্পর্কে বলেন,

﴿يَعِظُكُمُ اللَّهُ أَنْ تَعُودُوا لِمِثْلِهِ أَبَدًا إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ ١٧﴾ [النور: ١٧]

“তোমরা যদি মু’মিন হও, তবে যেন আর কখনো এমনটি না কর—এ বিষয়ে আল্লাহ তোমাদের উপদেশ দিচ্ছেন।”[১]

ইমাম মালিক আরো বলেন:
“অতএব, যে ব্যক্তি তাঁকে (আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) অপবাদ দেয়, সে কুরআনের বিরোধিতা করে। আর যে কুরআনের বিরোধিতা করে, সে মৃত্যুদণ্ডযোগ্য।”

ইমাম ইবনু হাযম আল-আন্দালুসী রহিমাহুল্লাহ বলেন:
“ইমাম মালিকের এই কথা সহীহ। এটি পরিপূর্ণ এক রিদ্দাহ (মুরতাদ হওয়া) এবং আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে আয়েশা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)-এর নির্দোষতা ঘোষণা করার বিষয়ে তাঁকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার নামান্তর।”

ইমাম নাওয়াওয়ী রহিমাহুল্লাহ বলেন:
“আয়েশা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)-এর বিরুদ্ধে অপবাদ থেকে তাঁর নির্দোষতার ব্যাপারে কুরআনের স্পষ্ট নস (অবিকল্পনীয় দলীল)-এর মাধ্যমে তা চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত হয়েছে। যদি কেউ এতে সন্দেহ পোষণ করে—আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন—তাহলে সে কাফের ও মুরতাদ হয়ে যাবে, মুসলিমদের সর্বসম্মত ঐক্যমতের ভিত্তিতে।”

ইমাম ইবন কাসীর রহিমাহুল্লাহ বলেন:
“সমস্ত ওলামায়ে কেরাম সর্বসম্মতভাবে একমত হয়েছেন যে, এই আয়াত নাযিল হওয়ার পর কেউ যদি আয়েশা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)-কে গালি দেয় বা তাঁকে সেই অপবাদ দেয়, তাহলে সে নিশ্চয়ই কাফির হয়ে যাবে। কারণ সে কুরআনের বিরোধিতা করছে।”

ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রহিমাহুল্লাহ বলেন:
“আয়েশা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)-কে অপবাদ দানকারী ব্যক্তির কাফির হওয়ার ব্যাপারে পুরো উম্মত একমত।”

ইমাম সুয়ূতী রহিমাহুল্লাহ বলেন:
“আলেমগণ বলেছেন: আয়েশা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)-কে অপবাদ দেওয়া কাফির বানিয়ে দেয়। কারণ আল্লাহ তা’আলা যখন তাঁর (আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)-এর অপবাদের কথা বলেন, তখন তিনি নিজেকে পবিত্র ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন, سُبْحَانَكَ هَذَا بُهْتَانٌ عَظِيمٌ (আপনি পবিত্র! এটি তো এক জঘন্য অপবাদ)। যেমনিভাবে তিনি নিজেকে পবিত্র বলেছেন যখন মুশরিকরা আল্লাহর জন্য স্ত্রী ও সন্তান সাব্যস্ত করেছিল।”

এ হচ্ছে শারঈ বিধান। এখন আপনারাই বলুন, রাফেযী শিয়ারা দিন-রাত এ কাজটিই করে যাচ্ছে, তাহলে তারা মুসলিম থাকে কীভাবে?

  1. [১]সূরা নূর, আয়াত ১৭।
Share on