(১) এখানে আল্লাহকে ‘বিচার দিনের মালিক’ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু এ দিনের প্রকৃত রূপটি যে কী এবং জনগণের সম্মুখে এ দিন কী অবস্থা দেখা দিবে তা এখানে প্রকাশ করে বলা হয়নি। অন্যত্র তা স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, ﴿وَمَا أَدْرَاكَ مَا يَوْمُ الدِّينِ* ثُمَّ مَا أَدْرَاكَ مَا يَوْمُ الدِّينِ* يَوْمَ لا تَمْلِكُ نَفْسٌ لِنَفْسٍ شَيْئاً وَالْأَمْرُ يَوْمَئِذٍ لِلَّهِ﴾ “বিচারের দিনটি কী, তা কিসে আপনাকে জানাবে? আবার জিজ্ঞাসা করি, কিসে আপনাকে জানাবে বিচারের দিনটি কী? তা এমন একটি দিন, যেদিন কেউই নিজের রক্ষার জন্য কোনোই সাহায্যকারী পাবে না এবং সমগ্র ব্যাপার নিরঙ্কুশভাবে আল্লাহর ইখতিয়ারভুক্ত হবে।” [সূরা আল-ইনফিতার: ১৭-১৯] আর يوم الدين বলতে যে বিচারের দিন, প্রতিফল তথা শাস্তি বা পুরষ্কার দানের দিন বুঝায়, তা অন্য আয়াতাংশে স্পষ্ট করে বলে দেয়া হয়েছে, ﴿يَوْمَئِذٍ يُوَفِّيهِمُ اللَّهُ دِينَهُمُ الْحَقَّ﴾ “আজকের দিনে আল্লাহ লোকদের প্রকৃত কর্মফল পূর্ণ করে দিবেন” [সূরা আন-নূর: ২৫] মোটকথা, আল্লাহ তা‘আলা ঘোষণা করছেন, তিনি কেবল ‘রব্বুল আলামীন, আর-রাহমান ও আর-রাহীমই নন, তিনি ‘মালিকি ইয়াওমিদ্দীন’-ও। অর্থাৎ আল্লাহ্ তা‘আলা কেবল এ জীবনের লালন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্যই এই বিরাট জগত-কারখানা স্থাপন করেননি, এর একটি চূড়ান্ত পরিণতিও তিনি নির্ধারিত করেছেন। অর্থাৎ তোমরা কেউ মনে করো না যে, এ জীবনের অন্তরালে কোনো জীবন নেই। এ ধারণাও মনে স্থান দিও না যে, সেদিনও তোমাদের তেমনি স্বেচ্ছাচারিতা চলবে যেমন আজ চলছে বলে তোমরা ধারণা করছ; বরং সেদিন নিরঙ্কুশভাবে এক আল্লাহরই একচ্ছত্র কর্তৃত্ব, প্রভূত্ব ও মালিকানা পূর্ণমাত্রায় কার্যকর থাকবে। আজ যেমন তোমরা নিজেদের ইচ্ছামত কাজ করতে পারছ- অন্ততঃ এর পথে প্রাকৃতিক দিক দিয়ে কোনো প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করা হয় না, সে চূড়ান্ত বিচার দিনে কিন্তু তা কিছু মাত্র চলবে না। সেদিন কেবল আল্লাহর মর্জি কার্যকর হবে। আজ যেমন লোকেরা সত্যের প্রচণ্ড বিরোধিতা করে সুস্পষ্ট অন্যায় ও মারাত্মক যুলুম করেও সুনাম সুখ্যাতিসহ জীবন-যাপন করতে পারছে, সেদিন কিন্তু এসব ধোঁকাবাজী এক বিন্দুও চলবে না। বিচার দিবসের গুরুগম্ভীর পরিবেশ ও পরিস্থিতি সম্পর্কে সামান্য আন্দাজ করা যায় এ কথা হতে যে, বিচারের দিন জিজ্ঞেস করা হবে, “আজকের দিনে একচ্ছত্র কর্তৃত্ব ও প্রভূত্ব কার?” তার উত্তরে সুস্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করা হবে, “তা সবই একমাত্র সার্বভৌম ও শক্তিমান আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট।” [সূরা গাফির: ৫৯], অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, “এটা সে দিনের কথা যেদিন কোনো লোকই অন্য কারও জন্য কিছু করতে সক্ষম হবে না। সেদিন সমস্ত কর্তৃত্বই হবে একমাত্র আল্লাহর জন্য।” [সূরা আল-ইনফিতার: ১৯] আল্লাহর এই নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব কার্যকর হবে প্রথম শিঙ্গায় ফুঁক দেয়ার দিন হতেই। বলা হয়েছে, “আর তাঁর নিরঙ্কুশ মালিকানা কার্যকর হবে শিঙ্গায় ফুঁক দেয়ার দিনই।” [সূরা আল-আন‘আম: ৭৩]
— ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
[১:৪] সূরা আল-ফাতিহা, আয়াত নং ৪
Share on
مَٰلِكِ يَوۡمِ ٱلدِّينِ ٤
বিচার দিনের মালিক(১)।
আয়াত ৪/৭